লীলা মজুমদার: বাংলা সাহিত্যের এক অমর কণিকা

Spread the love

১৯০৮ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি, রায় চৌধুরী বংশের একটি প্রখ্যাত পরিবারে লীলা মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেড়ে উঠেছিলেন বাংলার নবজাগরণের সময়কালে, এবং তার লেখনীতে সেই ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। তাঁর বিশেষত শিশু সাহিত্য জগতে অনবদ্য সৃষ্টি, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মাইল ফলক হিসেবে রয়ে গেছে।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

লীলা মজুমদার তার শৈশব কাটান পাহাড়ি শহর শিলং পরিবেশে। লরেটো কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনা করার পর, ১৯২৪ সালে তিনি কোলকাতায় ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্য বিষয়ে তিনি প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

সাহিত্যে অবদান

১৯২২ সালে, লীলা মজুমদারের প্রথম গল্প “লক্ষ্মী ছেলেসন্দেশ পত্রিকায় হয়। ১৯৫০-এর দশকে প্রকাশিত তার দ্বিতীয় লেখা দিন দুপুরে তাকে প্রচুর জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেয়। এটা মনে করা হয় যে, লীলা মজুমদারের শিশু সাহিত্যে ঝোঁকার পিছনে কাকা উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর সানিধ্য কাজ করে।

তিনি বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য রচনা করেছেন, যেমন হাস্যরস, গোয়েন্দা কাহিনি, এবং ক্লাসিক অনুবাদ (গালিভার্স ট্রাভেলস, দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি)।

তাঁর লেখা রান্নার বইগুলিতেও গল্পের সাথে রান্নার রেসিপি পাঠকদেরকে পাঠকের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।

ব্যক্তিগত জীবন ও নারীবাদ

১৯৩৩ সালে, লীলা তার বাবা-মায়ের পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন এবং করে ডা. সুধীর কুমার মজুমদারের সঙ্গে বিবাহ সম্পন্ন করেন। বিয়ে নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণ হলো, তিনি অন্য জাতির মানুষ কে বিয়ে করেছিলেন। এটি থেকে তার প্রগতিশীল এবং আধুনিক মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।

তিনি তার সাহিত্যিক কাজের মাধ্যমে সবসময় বলিষ্ঠ এবং শক্তিশালী নারী চরিত্র সৃষ্টি করেছেন, এমন একটি রচনা হলমহিলা মন্ডল“।

লীলা মজুমদার: উত্তরাধিকার ও স্বীকৃতি

পাকদণ্ডি” এবং “আর কোনোখানে” নামে আত্মজীবনীমূলক রচনাতে তাঁর তার জীবন ও কর্মের চিত্র ফুটে ওঠে। ১৯৬৩ সালে, তিনি নাটক “বকবাধ পালা” এর জন্য সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার অর্জন করে।

তার জীবন ও কাজ নিয়ে তৈরি পেরিস্তান – দ্য ওয়ার্ল্ড অফ লীলা মজুমদার ডকুমেন্টারিটি লীলা মজুমদারের জীবনীকে অতি সুন্দরভাবে তুলে ধরে।

তাঁর লেখা ভিন্ন স্বাদের গল্প, “বার্মিজ বক্স “এবং “দ্য ইয়েলো বার্ড” যেখানে জাদু, হাস্যরস এবং মানবিকতা মিশে আছে তা পাঠকদেরকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে।

লীলা মজুমদার বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, বিশেষত শিশু সাহিত্য ও হাস্যরসাত্মক রচনায় তার অবদান অনস্বীকার্য। তার বইগুলো বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

নিচে লীলা মজুমদারের উল্লেখযোগ্য কিছু বইয়ের তালিকা দেওয়া হল:

জনপ্রিয় গল্পের বই

  1. সব ভূতুড়ে
  2. দিন দুপুরে
  3. পদি পিসির বর্মী বাক্স
  4. গুপের গুপ্তধন
  5. গুপী পানুর কীর্তিকলাপ
  6. হলদে পাখির পালক
  7. ছায়ার মায়া
  8. রায়বাড়ি
  9. চিরকালের গল্পগাথা

রচনাসমগ্র

  1. লীলা মজুমদার রচনা সমগ্র (বিভিন্ন খণ্ডে সংকলিত তার রচনাসমগ্র)
  2. পাকদণ্ডী (আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ)
  3. আর কোনোখানে (রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্ত)

রান্নার বই

  1. রান্নার বই
  2. ঘরকন্নার বই

শিশুদের জন্য রচনা

  1. ছোটদের সমগ্র নাটক
  2. কল্পবিজ্ঞানের গল্প
  3. ছোটোদের আরব্য রজনী
  4. ইস্কুলের গল্প
  5. দুই বাংলার ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বই

  1. বাতাস বাড়ি
  2. মণি-মানিক
  3. কাগ নয়
  4. টংলিং
  5. অরণ্যের আড়ালে
  6. আমিও তাই
  7. পত্রমালা

ইংরেজি অনুবাদ ও রচনা

  1. The Yellow Bird
  2. Gulliverer Bhramanbrittanta written by Jonathan Swift

উত্তরাধিকার ও স্বীকৃতি

১৯৬৯ সালে তাঁর লেখা “আর কোনোখানে ” এর জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন।

এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন যেমন, সুরেশ স্মৃতি পুরস্কার, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, ভুবনেশ্বরী মেডেল প্রভৃতি। লীলা মজুমদার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট উপাধি লাভ করেন।

লীলা মজুমদার তাঁর আনন্দময় চেতনা, কল্পনাপ্রবণ বর্ণনা এবং সংস্কারমুক্ত চিন্তাভাবনার জন্য বাংলা সাহিত্য ও সমাজে চির অমর হয়ে থাকবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *