শ্রমশ্রী প্রকল্প (Shramshree Prakalpa in West Bengal): সম্পূর্ণ বিবরণ -2025

Shramshree Prakalpa: পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগস্ট 2025-এ এক গুরুত্বপূর্ণ সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পের সূচনা করেন যেটির নাম হল শ্রমশ্রী প্রকল্প (Shramshree Prakalpa)। শ্রমশ্রী প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হল ভারতের অন্য রাজ্য থেকে ফেরত আসা পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করা। বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা অনেক সময় অন্যান্য রাজ্যে গিয়ে নিপীড়িত হয় এবং তা সংবাদমাধ্যেও বারবার উঠে এসেছে। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে এবং তাদের সুরক্ষা দিতে শ্রমশ্রী প্রকল্পের সুচনা।
Contents
শ্রমশ্রী প্রকল্প: পটভূমি
বিগত কয়েক দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ বাঙালি যুবক এবং প্রাপ্তবয়স্করা কাজের সন্ধানে অন্য রাজ্যে যেমন মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, দিল্লি, কেরালা, পাঞ্জাব এবং অন্যান্য রাজ্যে যাচ্ছে। ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই খুঁজলে দেখা যাবে সমস্ত জায়গাতেই বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক বর্তমান। তবে মাঝে মাঝে বাঙালি শ্রমিকরা মজুরির বৈষম্য, ভাষাগত বৈষম্য এবং নিম্ন মানের জীবনযাত্রার শিকার হয়েছে। Covid-19 মহামারির সময় লক্ষাধিক মানুষ নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছে, মহামারি শেষ হওয়ার পর কেউ আবার কাজে ফিরে যেতে পেরেছে আবার কেউ পারেনি। এর ফলে আর্থিক সংকট, চাকরির জন্য হাহাকার, এবং জীবনযাত্রার মানও হ্রাস পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সামাজিক সুরক্ষা, চাকরির পুনঃপ্রশিক্ষন এবং Skill Development করার লক্ষে শ্রমশ্রী প্রকল্পের সূচনা করেছে।
শ্রমশ্রী প্রকল্পের উদ্দেশ্য
শ্রমশ্রী প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যগুলি হল :
- অন্যান্য রাজ্যে বৈষম্য এবং স্বল্প বেতনভুক্ত শ্রমিকদের শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা।
- আর্থিক সহায়তা, চাকরির জন্য দক্ষতা তৈরীর মাধ্যমে শ্রমিকদের পুনর্বাসন করা যাতে তারা পশ্চিমবাংলার অর্থনীতিতে অবদান দিতে পারে।
- দক্ষতা প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য বীমা, শিশুদের জন্য শিক্ষা, এবং স্ব-কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করা।
- নির্ভরতা বা নিরাপত্তাহীনতার পরিবর্তে মর্যাদা এবং দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার সাথে শ্রমিক এবং তাদের পারিবারিক জীবন সুনিশ্চিৎ করা।
- কর্মীশক্তিকে উন্নত করার এবং কোনও বাঙালি কর্মী যাতে পিছিয়ে না থাকে তা নিশ্চিত করার একটি প্রচেষ্টা।
সরকার উল্লেখ করেছে, “শ্রমশ্রী প্রকল্পটি কেবল অভিবাসী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার একটি উদ্যোগ নয়; এটি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার, এর কর্মীবাহিনীকে দক্ষ করার এবং কোনও বাঙালি শ্রমিক যাতে বাদ না পড়ে তা নিশ্চিত করার একটি প্রচেষ্টা।”
শ্রমশ্রী প্রকল্পের জন্য কারা যোগ্য?
এই প্রকল্পে সুবিধা পেতে কয়েকটি মানদন্ড ঠিক করা হয়েছে যেমন –
- বাঙালি শ্রমিক যারা অন্যান্য ভারতীয় রাজ্যে কাজ করেছেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে (বিশেষ করে হয়রানি, চাকরি হারানো বা বৈষম্যের কারণে) পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এসেছেন।
- আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং পশ্চিমবাংলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। বসবাসের প্রমাণ (ভোটার আইডি, আধার, ইত্যাদি) প্রয়োজন।
- আবেদনকারীকে পশ্চিমবঙ্গ অভিবাসী শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্প, ২০২৩ (West Bengal Migrant Workers Welfare Scheme, 2023) -এর অধীনে নিবন্ধিত হতে হবে।
- যারা তাদের ভাষাগত বা আঞ্চলিক পরিচয়ের জন্য স্পষ্ট বৈষম্য/হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন এবং উপযুক্ত ডকুমেন্টারি বা প্রশংসাপত্রের প্রমাণ (যেমন কাজের নথি, ভ্রমণ টিকিট, কর্মসংস্থান পত্র ইত্যাদি) থাকতে হবে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
- আবেদনকারীর ব্যাঙ্ক একাউন্ট থাকতে হবে।
*দ্রষ্টব্য*: এই স্কিমটি তাদের জন্য নয় যারা স্বেচ্ছায় চাকরি বা কাজ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এসেছেন, এটি তাদের জন্য যারা অন্য রাজ্যে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বার বৈষমতার মুখোমুখি হয়েছেন।
শ্রমশ্রী প্রকল্পের সুবিধাগুলি
শ্রমশ্রী প্রকল্পের আওতায় অনেক সুবিধা রয়েছে নিচে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হল :
এককালীন আর্থিক সহায়তা
- যোগ্য প্রত্যাবর্তনকারী শ্রমিকদের প্রাথমিক বসতি স্থাপনের খরচ মেটাতে ৫,০০০ টাকা এককালীন অনুদান দেওয়া হবে।
মাসিক ভাতা
- প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা করে সরাসরি কর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদান করা হবে।
- এই ভাতা এক বছর পর্যন্ত অথবা কর্মীর নতুন চাকরি পাওয়া (যেটি আগে হবে) পর্যন্ত প্রদান করা হয়।
- এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল নতুন কর্মসংস্থান খুঁজতে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে কর্মীদের ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে তাদের সহায়তা করা।
দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষণ
- শ্রমিকরা “উৎকর্ষ বাংলা” প্রকল্পের অধীনে বিনামূল্যে নির্মাণ, তথ্যপ্রযুক্তি, দর্জি, আতিথেয়তা, সৌন্দর্য, পরিষেবা, কৃষি এবং আরও অনেক কিছু প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবে।
কর্মসংস্থান এবং জব কার্ড
- সমস্ত সুবিধাভোগীকে বিশেষ জব কার্ড (শ্রমশ্রী আইডি) দেওয়া হবে, যার মাদ্ধমে তারা রাজ্য সরকার পরিচালিত কর্মসংস্থান গ্যারান্টি এবং প্লেসমেন্ট প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে সাহায্য করবে যেমন কর্মশ্রী প্রকল্প।
- গ্রামীণ যেসব চাকরির সুযোগ আসবে সেই চাকরির প্রকল্পগুলিতে এবং সরকারি প্লেসমেন্ট পরিষেবাগুলিতে অগ্রাধিকার পাবে।
স্ব-কর্মসংস্থান এবং উদ্যোক্তা
- নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে ইচ্ছুক শ্রমিকরা ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত সহজ শর্তে ঋণ পেতে পারেন এবং “উদ্যমান স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্প” (Udyaman Swanirbhar Karmasansthan Prakalpa) এর অধীনে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ এবং সংখ্যালঘু/এস সি-এস টি উন্নয়ন কর্পোরেশন থেকে ঋণ পেতে পারেন।
- আর্থিক সহায়তা, পরামর্শদান এবং সরকারি সুবিধা পাবেন।
শিশুদের জন্য শিক্ষা
- অন্য রাজ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি এবং বৃত্তি প্রদান করা হবে যাতে, তাদের শিক্ষা ব্যাহত না হয়।
স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা
- শ্রমিকদের পরিবারগুলিকে স্বাস্থ্য সেবা (Shasthya Sathi) এবং খাদ্যসাথী (Khadya Sathi) এর সুবিধা দেওয়া হবে।
- দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষার লক্ষে অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের সাথে বিশেষ সংযোগ প্রদান করা হবে।
| Benefit Type | Details |
| Immediate Grant | ₹5,000 one-time for return and re-settlement cost |
| Monthly Allowance | ₹5,000/month (max 12 months/until employment found) |
| Job Card/ID | Shramshree-specific identity card + entitlements |
| Skill Training | Free training in preferred trades (Utkarsh Bangla) |
| Self-Employment | Loans up to ₹50,000 + entrepreneurship support |
| Family Benefits | School admission, scholarships, health insurance, food security |
শ্রমশ্রী প্রকল্প : আবেদন প্রক্রিয়া
অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া:
- অফিসিয়াল পোর্টালটি খুলুন – www.karmasathips.wblabour.gov.in
- নিজেকে রেজিস্টার করুন এবং আপনার বিবরণ দিন যেমন ব্যক্তিগত তথ্য, বাংলার বাইরে কর্মসংস্থানের তথ্য এবং প্রমাণপত্র।
- আধার/ভোটার আইডি, বয়স, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং কাজের সূত্রে ভ্রমণের বিবরণ পূরণ করুন।
- এরপর সিস্টেম থেকে সমস্ত তথ্য এবং ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন হবে।
- এরপর আপনি ট্র্যাকিং ID পাবেন।
- ট্র্যাকিং এবং অনুমোদন
- সফল আবেদনকারীরা ডিজিটাল নিশ্চিতকরণ পান; চূড়ান্ত যাচাইয়ের পরে সরাসরি তহবিল স্থানান্তর করা হয়।
- ফাইনাল ভেরিফিকেশন এর পর আপনার একাউন্ট-এ টাকা ট্রান্সফার হয়ে যাবে।
Offline আবেদন পদ্ধতি:
- আবেদন শিবির: পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিভিন্ন ক্যাম্পের মাদ্ধমে স্পেশাল এনরোলমেন্ট প্রসেস শুরু করেছে , আপনি এর মাদ্ধমে আপনার নাম নথিভুক্ত করতে পারেন।
- ফর্ম fill up করে দেওয়ার পর ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন হবে তারপর আপনার একাউন্ট -এ টাকা ট্রান্সফার হবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- বসবাসের প্রমাণ হিসাবে আধার বা ভোটার আইডি
- বাংলার বাইরে অতীতের কাজের প্রমাণ (নিয়োগপত্র, বেতন স্লিপ, নিয়োগকর্তার শংসাপত্র, ভ্রমণ টিকিট, ইত্যাদি)
- ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ (পাসবুকের কপি)
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
শ্রমশ্রী প্রকল্পের সূচনা পশ্চিমবঙ্গে ফেরত আসা অভিবাসী শ্রমিকদের জীবনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আর্থিক সহায়তা এবং অন্যন্য সুবিধার মাধ্যমে শ্রমিকদের – কেবল দুর্দশা নয়, বরং মর্যাদা পুনরুদ্ধার করবে।






One Comment