শিক্ষাশ্রী প্রকল্প (Sikshashree Scheme in West Bengal)

২০১৪-১৫ সালে, শিক্ষাশ্রী স্কিমটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে চালু করা হয়েছিল। স্কিমের মাধ্যমে বই এবং ভরণপোষণ ভাতা মিশিয়ে, তপশিলি জাতি এবং উপজাতি (SC) ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণী ৫ থেকে ৮ পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়।
পূর্বে, শ্রেণী ৫ থেকে ৮ পর্যন্ত দিন-যাত্রী ছাত্রছাত্রীদের জন্য দুটি আলাদা ভাতা প্রদান করা হত: ১) বই ভাতা, এবং ২) ভরণপোষণ ভাতা। কিন্তু, এই ভাতাগুলির পরিমাণ খুবই কম ছিল এবং এটি নির্ধারিত উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে সক্ষম ছিল না। এছাড়া, ছাত্রছাত্রীদের নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং ভাতা প্রদান প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ ছিল।
এই সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে এবং তপশিলি জাতি এবং উপজাতি (SC) ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি সহজ, স্বচ্ছ এবং কার্যকরী পদ্ধতিতে সহায়তা প্রদান করতে, “শিক্ষাশ্রী প্রকল্প ” নামে একটি নতুন স্কিম প্রণয়ন করা হয়েছে।
এই প্রকল্পটি পূর্বের বই ভাতা এবং ভরণপোষণ ভাতা মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সরকারি, সরকারি-অনুদানপ্রাপ্ত এবং সরকারি স্বীকৃত স্কুলে শ্রেণী ৫ থেকে ৮ পর্যন্ত পড়াশোনা করা তপশিলি জাতি এবং উপজাতি (SC) ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রযোজ্য।
লক্ষ্য
শ্রেণী ৫ থেকে ৮ পর্যন্ত তপশিলি জাতি এবং উপজাতি (SC) ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা, যাতে তারা প্রাথমিক স্তরে আরও বেশি অংশগ্রহণ করতে পারে এবং বিশেষ করে মেয়ে ছাত্রদের মধ্যে ড্রপআউটের হার কমানো যায়।
সবুজ সাথী প্রকল্প (Sabooj Sathi Scheme in West Bengal)
সুবিধাসমূহ
১. এই স্কিমের অধীনে, যোগ্য ছাত্রছাত্রীদের শুধুমাত্র ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
শ্রেণী অনুযায়ী ভাতা (প্রতি বছর):
- শ্রেণী V: ₹৭৫০
- শ্রেণী VI: ₹৭৫০
- শ্রেণী VII: ₹৭৫০
- শ্রেণী VIII: ₹৮০০
২. ছাত্রছাত্রীদের প্রাক-ম্যাট্রিক স্তরে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা এবং বিশেষ করে মেয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ড্রপআউটের হার কমানো।
স্কলারশিপের জন্য যোগ্যতা মানদণ্ড
- জাতিগত শ্রেণী: আবেদনকারীকে তপশিলি জাতি এবং উপজাতি (SC) (Scheduled Caste) হতে হবে।
- শ্রেণী ভিত্তিক যোগ্যতা: ছাত্র/ছাত্রীটি ক্লাস V থেকে VIII পর্যন্ত পড়াশোনা করতে হবে।
- আয়ের সীমা: ছাত্র/ছাত্রীর পরিবারের বার্ষিক আয় ২.৫ লক্ষ টাকার বেশি হতে পারবে না।
- ভৌগলিক সীমাবদ্ধতা: পশ্চিমবঙ্গের ডে-স্কলার (দিনের স্কুলে পড়াশোনা করা) ছাত্র/ছাত্রীরাই এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- স্কুলের ধরন: আবেদনকারীকে পশ্চিমবঙ্গের কোনো সরকারী, সরকার-সহায়ক অথবা সরকারীভাবে অনুমোদিত স্কুলে নিয়মিত, ফুল-টাইম ছাত্র/ছাত্রী হতে হবে।
- স্কলারশিপের ধারাবাহিকতা: একবার স্কলারশিপ পেলে তা প্রতি বছর পুনরায় প্রদান করা হবে, তবে ছাত্র/ছাত্রীকে পরবর্তী বছরে আবেদন করতে হবে এবং তার ভাল আচরণ, উপস্থিতি এবং যোগ্যতা বজায় রাখতে হবে (ক্লাস VIII পর্যন্ত)।
- অন্যান্য স্কলারশিপ: আবেদনকারীকে একই সময়কালে অন্য কোনো স্কলারশিপ বা ভাতা গ্রহণ করা যাবে না। যদি জানা যায় যে আবেদনকারী অন্য কোনো উৎস থেকে একই ধরনের স্কলারশিপ নিয়েছেন, তবে তাকে সেই টাকা ফেরত দিতে হবে।
- ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজনীয়তা: আবেদনকারীকে একটি জাতীয়কৃত ব্যাংকে কোর ব্যাংকিং সুবিধাসহ একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
- প্রতি শ্রেণীর জন্য একবারের স্কলারশিপ: প্রতিটি শ্রেণীর জন্য এক বছর স্কলারশিপ প্রদান করা হবে। যদি কোনো ছাত্র/ছাত্রী একই শ্রেণী পুনরায় পাশ করে, তবে তাকে সেই শ্রেণীর জন্য দ্বিতীয়বার স্কলারশিপ দেওয়া হবে না। তবে, যদি সে পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয় এবং অন্য সমস্ত যোগ্যতা পূর্ণ থাকে, তবে তাকে স্কলারশিপ দেওয়া হবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- পরিচয় প্রমাণ: যেমন, আধার কার্ড
- জাতি প্রমান : জাতির প্রমাণপত্র
- ঠিকানার প্রমাণ: ভোটার বা আধার কার্ড
- পারিবারিক আয় সনদ: পরিবার আয়ের সার্টিফিকেট
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি: পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিস্তারিত: ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য
- শিক্ষাগত ডকুমেন্টস: শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমানপত্র
এগুলি সব ডকুমেন্টস আবেদন করার সময় প্রয়োজন হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া
অনলাইন আবেদন
আবেদনকারীকে পশ্চিমবঙ্গের Backward Classes Welfare Department & Tribal Development Department এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে: https://oasis.gov.in/
আবেদন প্রক্রিয়া
- লগইন প্রক্রিয়া:
- প্রথমে ওয়েবসাইটে গিয়ে User Type নির্বাচন করুন।
- তারপর District নির্বাচন করুন।
- এরপর Sub-Division নির্বাচন করুন।
- তারপরে Block/Municipality নির্বাচন করুন।
- তারপর School নির্বাচন করুন।
- তারপর User ID এবং Password প্রবেশ করুন।
- এবার Login Button-এ ক্লিক করে লগইন করুন।
- ড্যাশবোর্ডে পৌঁছানো:
- লগইন করার পর আপনি ড্যাশবোর্ডে রিডাইরেক্ট হবেন।
- আবেদন ফর্ম পূরণ:
- ড্যাশবোর্ডের বামপাশে Application অপশনটি দেখতে পাবেন, সেটিতে ক্লিক করুন।
- তারপর একটি নতুন Sikshashree Application Form দেখা যাবে, তাতে ক্লিক করুন।
- আবেদন ফর্মটি পূর্ণ করে Submit বাটনে ক্লিক করুন।
এভাবে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
অর্থব্যবহার ও উপকারভোগীর সংখ্যা (প্রতি বছর)
বছর | ব্যবহৃত পরিমাণ (₹) | উপকারভোগীর সংখ্যা |
---|---|---|
২০১৪-১৫ | ১৭,৪১,৭০,৪০০ | ২,১৭,৭১৩ |
২০১৫-১৬ | ১৮,১৬,৩২,০০০ | ২,২৭,০৪০ |
২০১৬-১৭ | ১৮,৩৯,৮৪,৮০০ | ২,২৯,৯৮১ |
২০১৭-১৮ | ১৬,৪০,৪৪,০০০ | ২,০৫,০৫৫ |
২০১৮-১৯ | ১৬,০০,০০,০০০ | ১,৯৯,৪৬৪ |
২০১৯-২০ | ১৪,৭৫,০০,০০০ | ১,৮৪,৩৭৫ |
২০২০-২১ | ১৬,৩১,০০,০০০ | ২,০৩,৮৭৫ |
২০২১-২২ | ১৪,৪৮,০০,০০০ | ১,৮১,০০০ |
source: